News Report In Details

#70. পঞ্চগড়ে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, বাবার সঙ্গে চিকিৎসকের দুর্ব্যবহার

1 month, 2 weeks ago

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় চকলেট ও খেলনার প্রলোভন দেখিয়ে মাত্র পাঁচ বছরের এক মুসলিম শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে হিন্দু যুবক বণিক রায়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলার পর থেকেই সমঝোতার জন্য পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির স্বজনরা।

 

ঘটনাপ্রবাহ

 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে দেবীগঞ্জ পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় যুবক বণিক রায় শিশুটিকে চকলেট ও খেলনার লোভ দেখিয়ে একান্ত স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটি কান্নাকাটি করলে পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। অভিযুক্ত কণিক রায় পালিয়ে যায়।

 

অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে প্রথমে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৮ সেপ্টেম্বর ছুটি দেওয়া হয়।

 

শিশুটির বাবা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মামলা করার পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও আসামিপক্ষ ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে। “আমাকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে সমঝোতায় যেতে। কিন্তু আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, মেয়ের জন্য আমি ন্যায়বিচার চাই, কোনোভাবেই সমঝোতায় যাবো না।”

 

মামলার অবস্থা

 

এ ঘটনায় শিশুটির বাবা ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে দেবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা বলেন, “থানায় মামলা হয়েছে। শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত তরুণ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।”

 

হাসপাতালে চিকিৎসকের দুর্ব্যবহার

 

এদিকে শিশুটির চিকিৎসা চলাকালে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিশুর বাবার সঙ্গে অশালীন ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

 

ভিডিওতে দেখা যায়, চিকিৎসক অভিভাবকের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন। তিনি বলেন—“এই ব্যাটা থানায় যায় পড়ে রহিবো… ব্লেড কিনে নিয়ে বাড়ি গিয়ে … মান-সম্মান তোমাদের কিচ্ছু নাই… এ বেটা ঘুষায়ে নাক ফাটায় ফেলবো, একইসঙ্গে চিকিৎসাও দিব।”

 

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান অভিযুক্ত চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন এবং সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।

 

ডা. আবুল কাশেম পরে গণমাধ্যমে স্বীকার করেন যে, কথা বলার ভঙ্গিতে ভুল হয়েছে। তিনি বলেন, “হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি ছিল। অজান্তেই কথার মধ্যে অতিরিক্ত রূঢ়তা চলে এসেছে। এ ঘটনায় আমি ক্ষমা চাইছি।”

 

সার্বিক পরিস্থিতি

 

একদিকে পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা, অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে তার বাবার সঙ্গে চিকিৎসকের অমানবিক আচরণ—দুটো ঘটনাই পঞ্চগড় জেলায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে সচেতন মহল।