দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী সংক্রমণ— “মগজখেকো অ্যামিবা” বা Naegleria fowleri। সম্প্রতি মালাপ্পুরাম জেলার ৪৫ বছর বয়সী এক নারী Primary Amoebic Meningoencephalitis (PAM)-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর রাজ্যজুড়ে জনস্বাস্থ্য মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সংক্রমণের প্রকৃতি
এই এককোষী অ্যামিবা সাধারণত উষ্ণ ও মিষ্টি পানিতে পাওয়া যায় এবং নাকের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে সরাসরি মস্তিষ্কে আক্রমণ চালায়। বিশ্বজুড়ে ১৯৬২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৪৮৮টি সংক্রমণ নথিভুক্ত হলেও, মৃত্যুহার প্রায় ৯৫%।
কেরালায় ২০১৬ সাল থেকে সংক্রমণ ধরা পড়লেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরেই ৭০ জন আক্রান্ত, যার মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক—সব বয়সের মানুষ রয়েছেন।
চিকিৎসা ও বাঁচার হার
সংক্রমণ শনাক্ত করা গেলেই শুরু হয় antimicrobial drugs ও steroids-এর সমন্বিত চিকিৎসা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত সনাক্তকরণ ও চিকিৎসার কারণে আগের তুলনায় রোগীর বেঁচে যাওয়ার হার কিছুটা বেড়েছে। কেরালার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে উন্নত ল্যাব টেস্টের ব্যবস্থা থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক রোগ ধরা পড়ছে।
সংক্রমণের উৎস
দূষিত পুকুর বা কুয়ার পানি
সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সময়
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী নাকে পানি টেনে নেওয়া
এমনকি দূষিত পানি দিয়ে রান্না বা গাঁজা সেবনের মাধ্যমেও আক্রান্ত হওয়ার নজির রয়েছে।
কেরালায় রয়েছে প্রায় ৫৫ লক্ষ কুয়া ও ৫৫ হাজার পুকুর, যেগুলোই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পানি সরবরাহের মূল ভরসা। ফলে ঝুঁকি এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
সরকারের পদক্ষেপ
প্রায় ২৭ লক্ষ কুয়া ক্লোরিন দিয়ে পরিশোধনের উদ্যোগ
পুকুরে সাঁতার বা স্নান বন্ধে সতর্কীকরণ বোর্ড স্থাপন
সুইমিং পুল নিয়মিত ক্লোরিন দিয়ে পরিষ্কার করার নির্দেশ
নাক পরিষ্কারে উষ্ণ পানি ব্যবহার ও সাঁতারের সময় nose-plug ব্যবহারের পরামর্শ
তবে সব পানি সংরক্ষিত স্থানকে ক্লোরিন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব নয়— এতে মাছ ও পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। তাই মূল জোর দেওয়া হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। উষ্ণ ও দূষিত পানি Naegleria fowleri-র জন্য আদর্শ পরিবেশ। কেরালার উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু, সঙ্গে পানি উৎসের দূষণ মিলিয়ে আগামী দিনে সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
উপসংহার
কেরালার স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, “সংক্রমণ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী হলো সচেতনতা।” সাঁতার বা স্নানের সময় সতর্ক থাকা, অপরিষ্রুত পানি এড়িয়ে চলা এবং প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই এখন একমাত্র ভরসা।